নকশি কাঁথা বাংলাদেশ লোক শিল্প সংস্কৃতিতে অঙ্গাওঙ্গি ভাবে জরিত। নকশি কাঁথা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যপূর্ণ সেলাই শিল্প। বাঙ্গালীর সংস্কৃতিতে নকশি কাঁথার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। নকশি কাঁথা হলো সাধারন কাঁথার অপর নানান ধরনের নকশা করে বানানো বিশেষ প্রকারের কাঁথা। আমরা শীত নিবারণের জন্য নকশি কাঁথা ব্যবহার করি। নকশি কাঁথা শত শত বছরের পুরনো বাংলাদেশ সংস্কৃতির একটি অংশ। নকশি কি? নকশি বলতে কোনো কিছুর অপরে নকশা করাকে বুঝায় যেমন, কাঁথার অপর নকশা, বাড়ির জানালা দরজার অপরে নকশা, এই নকশা করাকেই নকশি বলে।
কাঁথা কি? সাধারনত ছেড়া কাপড় একত্র সেলাই করে প্রস্তুত মোটা আস্তরণ বা শীতের বস্ত্র।
অন্যান্য লোকশিল্পের মতো কাঁথার অপর দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিস যা আবহাওয়া পরিবেশ ও অর্থনৈতিক প্রভাব আছে। সম্ভাবত প্রথম দিকে কাঁথা ছিলো জোড় তালি দেওয়া কাপড়। পরবর্তীতে এটি থেকে নকশি কাঁথার আবির্ভাব হয়।
নকশি কাঁথা তৈরি করার জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় জিনিসঃ
নকশি কাঁথা তৈরিতে নানান রং এর সুতা প্রয়োজন। তবে সাধারনত পুরাতন কাপড়ের পাড় থেকে সুতা তুলে অথবা তাঁতিদের কাছ থেকে নীল, লাল, হলুদ, বেগুনী, রং এর সুতা কিনে আনা হয়। এবং একটি কাঁথা সেলাই করার জন্য সুচও বিশেষ প্রয়োজন হয়।
নকশি কাঁথা তৈরি করণঃ
নারীরা পাতলা পুরনো কাপড় স্তরে স্তরে সজ্জিত করে সেলাই করে কাঁথা তৈরি করে থাকেন। কাঁথা মিত্যব্যয়ীতার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ, এখানে একাধিক পুরানো কাপড় একত্রীত করে নতুন একটি কাঁথা তৈরি করা হয়। কাঁথা তৈরির কাজে পুরনো শাড়ি, লুঙি, ধুতি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী কাঁথা পুরুত্ব কম বা বেশি হয়। পুরুত্ব অনুসারে তিন থেকে সাতটি শাড়ি স্তরে স্তরে সাজিয়ে নিয়ে স্তর গুলোকে সেলাই এর মাধ্যমে জুড়ে দিয়ে কাঁথা তৈরি করা হয়। এবার কাঁথার অপর লাল, নীল, হলুদ, বেগুনী, নানান ধরনের সুতা দিয়ে ফুঁড় তুলে লতা পাতা বিভিন্ন নকশা দিয়ে তৈরি করা হয় নকশি কাঁথা।
নকশি কাঁথার ব্যবহারঃ
আমাদের গ্রাম ও শহরে নকশি কাঁথার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। আমাদের বাড়ি মেজে ও দেওয়ালেও নকশি কাঁথার ব্যবহার করে বাড়ির সুন্দর্য ও সম্পূর্ণ করা হয়। ও ঘরের বিছানার ও টেবিলের কাপড় হিসেবে নকশি কাঁথার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এবং দরজা জানালার পর্দা হিসেবে নকশি কাঁথার প্রচলন রয়েছে। হালকা শীতের সময় আমরা কাঁথা শরীরে জোড়িয়ে শুয়ে থাকি। আমরা সৌন্দর্যটা প্রাধন্য পাওয়ার জন্য কম্বলের জায়গায় নকশি কাঁথা ব্যবহার করি।
নকশি কাঁথার গল্পঃ
বেশিরভাগ গ্রামের নারীরা নকশি কাঁথা শিল্পে দক্ষ। সাধারনত গ্রামের মহিলারা তাদের অবসর সময়ে নকশি কাঁথা সেলাই করে থাকেন। তবে নকশি কাঁথা সেলাই করার জন্য অনেক সময় ও শ্রমের প্রয়োজন হয়। নতুন জামায় ও নববউকে উপহার দেওয়ার জন্য নকশি কাঁথা সেলাই করেন। একটি কাঁথা তৈরি করার পেছনে অনেক হাসি কান্নার কাহিনি রয়েছে। বর্ষাকাল এবং বিকাল ও রাতের খাওয়ার পর বাড়ির সব মহিলারা এক সাথে বসে গল্প করতে করতে কাঁথা সেলাই করেন তাই নকশি কাঁথাকে মনের কাঁথাও বলা হয়। তাই আমরা উদ্দ্যোগ নিয়েছি আপনাদের কাছে খাটি বাংলার ও গ্রাম বাংলার সংস্কৃতিতে জোড়ানো ঐতিহ্যপূর্ণ ভাবে তৈরি করা ভিন্ন ভিন্ন নকশায় আঁকা নকশি কাঁথা পৌছিয়ে দেবো।
পদটিকাঃ
মিতব্যয়ী (Thrifty) যে পরিমাণ মতো ব্যয় করে, অলপব্যয়ী, হিসাবী। পুরুত্ব মানে পরিমাণ বা পরিমাপ। নকশি মানে কোনো কিছুর উপর নকশা করাকে বোঝায়। কাঁথা সাধারনত পুরনো কাপড় একত্র সেলাই করে প্রস্তুত মোটা আস্তরন শীত বস্ত্র। নববউ মানে নতুন বউ।
Authors: maru
Leave a Reply