আম কীঃ
আম ম্যাঙ্গিফেরা গণের বিভিন্ন প্রজাতির গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদে জন্মানো এক ধরনের সুস্বাদু ফল। কাঁচা অবস্থায় আমের রং সবুজ এবং পাকা অবস্থায় হলুদ হয়ে থাকে। আমের আরো অনেক জাত আছে বিভিন্ন রং বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন গঠনের বিভিন্ন স্বাদের। আম একটি রসালো, অর্ধবৃত্তাকার গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় ফল যা হলুদ, সবুজ, লাল রং হয়ে থাকে এবং যেটির মাঝখানটা শক্ত পাথরের মতো। পাকলে এটিকে খাওয়া যায় কিংবা কাঁচা অবস্থায় এটি দিয়ে আঁচার কিংবা চাটনি বানানো যায়। তিন শতরও অধিক বৈচিত্র্যের আম রয়েছে।
কিছু আম এর জাতের নামঃ
আমের প্রায় কয়েকশ জাত রয়েছে তার মধ্যে কিছু জাতের নাম যেমনঃ
- ফজলি
- ল্যাংড়া
- গোপালভোগ
- খিরসাপাত
- অরুনা
- আম্রপালি, (আম রূপালি)
- মল্লিকা
- সুবর্নরেখা
- মিশ্রিদানা
- নিলাম্বরী
- কালীভোগ
- কাঁচামিঠা
- আলফানসো
- বারোমাসি
- তোতাপুরী
- কারাবাউ
- কেঊই সাউই
- গোপাল খাস
- কেন্ট
- সূর্যপূরী
- পাহুতান
- ত্রিফলা
- হাড়িভাঙ্গা
- ছাতাপরা
- গুঠলি
- লখনা
- আদাইরা
- কলাবতী ইত্যাদি।
আম আমাদের প্রিয় ফলঃ
আমরা সবাই ফলের রাজা আম বলে যানি। কিন্তু ফলের রাজা কেনো আম হইলো? কোনো আমে কাচা অবস্থায় যে গন্ধটা থাকে পাকার পরে তার থেকে মিষ্টি গন্ধ বের হয়? পৃথিবীর মধ্যে অন্যত্ম সুস্বাদ একটি ফল হইলো আম। যদিও কাঠাল আমাদের জাতীয় ফল তারপরেও কাঠালের থেকেও আম খেতে পছন্দ করি আমরা সবাই। আমকে ফলের রাজাও বলে থাকেন অনেকে। আম আমাদের রাজশাহী জেলার, বাঘা থানেতে, প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয়। এ কারনে আমের দাম টাও তুলনা মূলক কম।
আমের ইতিহাসঃ
ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭-এ আলেকজান্ডার সিন্ধু উপত্যকায় আম দেখে ও খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এ সময়ই আম ছড়িয়ে পড়ে মালয় উপদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ ও মাদাগাস্কারে। চীন পর্যটক হিউয়েন সাং ৬৩২ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এ অঞ্চলে ভ্রমণে এসে বাংলাদেশের আমকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করেন। অসেম ও মায়ানমারের জঙ্গলে প্রথম আমের উদ্ভিদ পাওয়া যায়। প্রায় ৬ হাজার বছর আগে আমের জন্ম হয়। আবার আমকে পবিত্র ফলা বলা হয়েছে ইতিহাসের পাতায়, কিন্তু কেনো আমকে পবিত্র ফল বলা হয়েছিলো আসুন আমরা যেনে নি।
আমকে কেনো পবিত্র ফল বলা হয়ঃ
আসলে অনেক সন্ন্যাসী ও গুরুরা এবং দেবি-দেবোতারা ধ্যান করতো বোট গাছের নিচে ও যেকোনো গাছের নিচে। শুধু ধ্যান নয় গরমের সময় আম গাছের ছায়ার নিচে বসে থেকে গল্প করতে আমরা সবাই পছন্দ করি। এছাড়াও গৌতম বৌদ্ধা যাকে আমরা সবাই বৌদ্ধা ধর্মের জনক বলে চিনি। সেই গৌতম বৌদ্ধা আম গাছের নিচে বসে ধ্যান করতেন তাই আমকে ইতিহাসে পবিত্র ফল হিসেবে জানা যায়।
পাকা আম ও কাচা আম এর মধ্যে বৈশিষ্ট্যঃ
সাধারণত পাকা আমে কমলা-হলুদ বা লালচে রং এর খোসা হয়ে থাকে এবং সরস হওয়ায় এটি খাওয়ার জন্য উপযুক্ত হয়ে থাকে, আর সবুজ খোসা যুক্ত আম হলো কাচা যেটা খাওযা যাই না। এছাড়াও কিছু জাতের আম আছে যেগুলো কাচা অবস্থায় খাওয়া যাই। আম এর বিভিন্ন জাত রয়েছে, বিভিন্ন রঙ এর, বিভিন্ন গঠনের, বিভিন্ন স্বাদের।
আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাঃ
এই ফলের আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা হজমে সহায়তা করে। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে। – আম কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, রক্তস্বল্পতা ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। – পাকা আম রক্তে কোলেস্টেরলের ক্ষতিকর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
কাচা আম টক আবার পাকা আম মিষ্টি হয় কেনোঃ
কাঁচা আমে বিভিন্ন ধরনের জৈব এসিড থাকে। যেমন সাক্সিনিক এসিড ,ম্যালেয়িক এসিড প্রভৃতি থাকে, যার ফলে কাঁচা আম টক। কিন্তু আম যখন পরিপক্ব হয়ে পেকে যায় তখন আমের মধ্যে থাকা এই এসিডগুলির রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ তৈরি হওয়ার কারনে কাঁচা আম পাকলে মিষ্টি হয় খেতে।
পাকা আমে ও কাচা আমে কোন কোন এসিড থাকেঃ
কাচা আমেঃ
- সাক্সিনিক এসিড
- ম্যালেয়িক এসিড
- অক্সালিফ এসিড
- সাইট্রিফ এসিড
- ম্যালিক এসিড ও
- সাকসেনিক এসিডথাকে। কাচা আম আমাদের দেহের রক্ত পরিষ্কার করে।
পাকা আমেঃ
- অক্সালিফ এসিড
- সাইট্রিফ এসিড
- ম্যালিক এসিড
- সাকসেনিক এসিডথাকে। তাই পাকা আম খুব সুস্বাদ আর মজা ও মিষ্টী খেতে।
আম আমাদের যে উপকারে আসেঃ
পুষ্টিবিদরা বলেন, আম নানান পুষ্টি উপাদানে ভরপুর যা শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি কর্মশক্তি যোগাতেও সহায়তা করে। তাই করোনার ক্রান্তিকালে সবারই বেশি বেশি আম খাওয়া উচিত। পাকা আমে রয়েছে আয়রণ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি ও এ, রিভোফ্লেভিন, থায়ামিন, খনিজ লবণ, শ্বেতসার এবং ভিটামিন বি-১ ও বি-২।
আমে কি কি ভিটামিন আছেঃ
পাকা আম ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ। আমের আয়রন, আঁশ, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও খনিজ উপাদান শরীর সুস্থ–সবল রাখতে সাহায্য করে। ক্যারোটিন চোখ সুস্থ রাখে, সর্দি-কাশি দূর করে। কাঁচা আমে ৯০ মাইক্রোগ্রাম এবং পাকা আমে ৮ হাজার ৩০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন থাকে।
কাচা আমের ও পাকা আমের গুনাগুন ও ভিটামিন গুলোঃ
পাকা আম এর তুলনায় কাচা আমে ভিটামিন “সি” এর পরিমান বেশি থাকে। কাচা আমে খনিজ লবনের উপস্থিতিও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে। দাঁত, নখ, চুল, মজবুত করার জন্য কাচা আমের খনিজ লবন উপকারী ভূমিকা পালন করে ও হজম শক্তি বৃদ্ধী পায়।পাকা আম কোলেস্টেরলের যাত্রাকে নিয়ন্ত্রনে রাখে, পাকা আমে থাকে উচ্চমাত্রার ভিটামিন “এ” পেকটিন ও আঁশ। যা রক্তের কোলেস্টোরলের মাত্রাকে কমাতে কাজ করে। ফ্রেশ আমে থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের তরলের জন্য খুবই জরুরী একটি পুষ্টী উপাদান, যা উচ্চ রক্ত চাপকে নিয়ন্ত্রনে কাজ করে। আমের আয়রন, আশ, পটাশিয়াম, ভিটামিন “সি” ও খনিজ উপাদান শরীর সুস্থ-সবল রাখতে সাহায্য করে। ক্যারোটিন চোখ সুস্থ রাখে, সর্দি -কাশি দূরে রাখে। কাচা আমে ক্যারোটিনের পরিমান কম থাকে আর পাকা আমে ক্যারোটিন এর পরিমান বেশি থাকে।
আম গাছের উপকারিতাঃ
আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় গাছ কী? এর উত্তর হলোঃ (আম গাছ)। অতি গরমের সময় কাঁচা আম পুড়িয়ে সরবত করে খেলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে। আগুনে পুড়ে গেলে আম পাতার প্রলেপ লাগালে উপকার পাওয়া যায়। আম গাছের ছাল বেটে (২ চা চামচ) ৪৫০ গ্রাম পানিতে সেদ্ধ করে নিন, যখন পানি ৪৫০ গ্রাম থেকে শুকিয়ে ১০০ গ্রাম হয়ে যাবে তখন তা পান করলে কৃমি রোগ সারবে। বমি বমি ভাব হলে কপি আম পাতায় ঘি ও চন্দন মাখিয়ে শুঁকলে বমি ভাব কমবে ইত্যাদি।
Authors: rafak
Leave a Reply