আমাদের বাঙালীর সংস্কৃতিতে ঘী খুবই জনপ্রিয় একটি খাদ্য। আমরা জানি আমাদের দেশে ঘী এর দাম একটু বেশি কারণ ঘী একটি উন্নত মানের খাদ্য। আর ঘীতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও পুষ্টি গুন উপকারিতা। ঘী অন্যান্য খাদ্যের থেকে অন্যতম মানের পুষ্টি জগায় আমাদের শরীরে। আর ঘীতে ভ্যাজাল একটু বেশি থাকে। এর জন্য আপনারা ঘী একটু দেখে শুনে কিনে খাবেন। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি সবাইকে খাটি ও ভ্যাজাল মুক্ত ঘী পৌছাই দিবো। এছাড়াও ঘী এর ব্যাপারে সাবধানতা থাকতে হবে কেনো না খাটি ঘী আমাদের শরীরের পুষ্টি ও উপকারিতা ও নানা রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আর ভ্যাজাল যুক্ত ঘী খেলে আমাদের শরীরের নানান রোগ সৃষ্টি করে। এবং ঘী বাজারে ক্ল্যারিফাইড বাটার (Clarified Butter) নামেও পরিচিত যা বেশির ভাগই ভ্যাজার যুক্ত হয়ে থাকে। তাই ক্রেতা সাবধানতার সাথে দেখে শুনে কিনবেন। যদি আপনি সাবধান থেকে খাটি ঘী কিনেন সেটাতে হবে আপনার উপকার কিন্তু যদি আপনি সাবধান না হয়ে কিনেন তাহলে আপনি বুঝতেও পারবেন না যে আপনি টাকা দিয়ে বিষ কিনলেন। আমরা আপনাকে জানাবো খাটি ঘী তৈরি করন এবং খাটি ঘী দেখতে কেমন ও খেতে কেমন হয়। আসুন ঘী নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।
ঘী কী
আসুন জেনে নি ঘী জিনিসটা কি? এবং ঘী এর অপকারিতা ও উপকারিতা কী? না জেনে খাওয়া ঠিক নয়। তাই আসুন আগে জানি তার পরে খাই। ঘী একটি তরল ও চর্বি জাতিয় খাদ্য যেটা সবাই খেতে ভালোবাসে। আমাদের গ্রাম বাংলায় গরম ভাতের সাথে ঘী ছাড়া মানায় না। ঘী দিয়ে নানা রকম পিঠা তৈরি করে ও বিভিন্ন রকম ভাজার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঘী দিয়ে ভাজা পিঠা খেতে তো ভালো লাগেই সাথে একটি অন্যরকম মিষ্টি ঘ্রান নাকে এসে লাগে। ঘী দিয়ে দোকানের মিষ্টি তৈরি করে। ঘি এর আরেক নাম হলো ক্ল্যারিফাইড বাটার (Clarified Butter), যেটা বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। খাটি ঘী বলতে মিষ্টি ঘ্রান ও জমে যায় না। ঘী এর দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ার কারনে সবাই কিনে খেতে পারেন না। তাই বাজারে বিক্রি করে ভ্যাজাল মিশ্রিত ঘী যার মধ্যে গরু-ছাগলের চর্বি মিশানো হয়। এছারাও মিষানো সয়াবিন তেল পচা মিষ্টি শিমুল ফুলরে বিচি পামল তেল। খাটি ঘী এর দাম বেশি হওয়ার কারন এটি খুব যত্ন সহকারে খাটি ঘী তৈরি করার জন্য প্রয়োজন হয় গরুর অনেক দুধ তাই খাটি ঘী মানে ও দামে সবই বেশি এবং পুষ্টি গুন ও উপকারিতাও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে।
ঘী আসলে কীঃ
ঘী আসলে সম্পূর্ন চর্বি জাতীয় খাদ্য ইংরেজিতে যা ক্ল্যারিফাইড বাটার (Clarified Butter) ও মাখোন নামে পরিচিত। ঘীয়ে প্রায় পুরোটাই চর্বি এবং ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশই হলো চর্বি বাকি ০.১ শতাংশ হলো জলীয় দ্রাবন যা চর্বিতে দ্রাবনীয়। সম্পৃন্ত চর্বি হওয়ায় এটি বাইরে সাধারন তাপমাত্রাতেই সংরক্ষন করা যায়।
ঘী এর পুষ্টি গুন ও উপকারিতাঃ
ঘীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহয্য করে এবং আমাদের শরীরে কোনো খারাপ ব্যাক্টিরিয়া সৃষ্টি করতে দেয় না। এছারাও ঘীতে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি যা আমাদের ক্ষুধা কমাতেও সাহায্য করে আর ক্ষুধা কম লাগা দেহের ওজন কমাতেও কার্যকর। ঘী আমাদের ত্বক এর জন্য উপকারি এবং জরুরি একটি উপাদান ।
ঘীতে কি কি ভিটামিন রয়েছেঃ
ঘীতে রয়েছে
- ভিটামিন “এ”
- ভিটামিন “ডি”
- ভিটামিন “ই”
- ভিটামিন “কে” যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। হাড়, চুল ও চোখের জন্য ঘী উপকারি ভূমিকা রাখে। এছারাও অন্ত্র থেকে বিষাক্ত ব্যাক্টিরিয়া দূর করতেও সাহায্য করে ঘী। গবেষণায় দেখা গেছে ঘীয়ের চর্বির গঠন যেমন তাতে পাওয়া যায় ডিএইচএ। এই ডিএইচএ এক ধরনের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির।
ঘী এর ব্যবহারঃ
ঘী খেতে পারেন বা ব্যবহার করতে পারেন নানা রকম ভাবে। ঘী যেমন রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন তেমনি রূপচর্চায় ও ব্যবহার করতে পারেন। রান্নায় তেলের পরিবর্তনে ঘী ব্যবহার করতে পারেন। এটি যেমন খাবারের স্বাদ বাড়াবে, তেমনি এর পুষ্টি ও উপকারিতাও পাবেন। রান্নার পাশাপাশি রূপচর্চায় এটি ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকে সরাসরি ঘী ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক কোমল ও মসৃণ হয়। এছারাও কোষ্ঠকাঠিণ্য বা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাও ঘী খেতে বা লাগাতে পারেন। রান্না ছাড়াও বিভিন্ন সিদ্ধ বা ভর্তায় কিংবা গরম ভাতের সাথে ঘী খেতে পারেন।
ঘী রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টোরল কমায়ঃ
ঘী একটি কোলেস্টোরল যুক্ত খাবার। তাই অনেকে মনে করেন ঘী দেহে কোলেস্টোরলের পরিমান বাড়ীয়ে দিবে কিন্তু আসলে তা নয়। এটি দেহের ও রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টোরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং উপকারি কোলেস্টোরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এর ফলে দেহের উপকার হয়।
ঘী হজমশক্তি বাড়াই ও কোষ্ঠকাঠিণ্য সমস্যা দূর করেঃ
ঘী এ থাকে মিডিয়াম চেন-ফ্যাটি এসিড যা দেহে এনার্জি বা শক্তি জোগায় পাশাপাশি এতে থাকা বাইটারিক এসিড যা হজম শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। এছারাও এটি কোষ্ঠকাঠিণ্য সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে।
ঘী এর অপকারিতাঃ
ঘী এর উপকার অনেক আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির করে বলে এই খাবার কি তাহলে খেতেই থাকবো? এর উত্তর হলো না। সব খাবারের মতো ঘীও অতিরিক্ত খেলে দেহের উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে। তাই ঘী খাওয়া উচিৎ পর্যাপ্ত পরিমাণে। ঘী পর্যাপ্ত পরিমাণে না খেয়ে অতিরিক্ত খেলে যা যা ক্ষতি বা অপকার হতে পারে।
1.অতিরিক্ত ঘী খেলে দেহের কোলেস্টোরলের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের ঝুকি বেড়ে যায়।
2.অতিরিক্ত ঘী খেলে দেহের চর্বির পরিমান বেড়ে যেতে পারে। ফলে দেহের ওজন বেড়ে যায় এবং নানা রোগ দেখা দেয়।
3.পর্যাপ্ত পরিমানের বেশি ঘী খেলে গ্যাস্টিকের সমস্যা হতে পারে পাশাপাশি পেট ফাপা ও পেট ফুলে যেতে পারে।
4.এছাড়াও যাদের হাড়ের সমস্যা আছে তাদের ঘী বেশি খাওয়া উচিৎ নয়। এতে হিতের বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ঘী নিয়ে আমাদের মতামত/প্রত্যাশাঃ
ঘী নিয়ে আমাদের মধ্যে বিভিন্ন রকম ধারনা আছে। কারো মতে ঘী উপকারি আবার কেউ মনে করেন ঘী খাওয়া উচিৎ নয়। আসলে ঘীয়ে উপকার ও আছে আবার অপকার উভয়ই রয়েছে। তবে অপকারির চেয়ে উপকারিতাই বেশি রয়েছে। তবে ঘী থেকে উপকারিতা নিতে হলে অবশ্যই আপনাকে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। দেহের উপকারের জন্য প্রতিদিন এক চামচ ঘী খেতে পারেন। এতে দেহে নানা রকম উপকার পাবেন। তবে কোনো মতেই খুব বেশি খাওয়া যাবে না। আবার যাদের শরীরে এমন সব সমস্যা আছে যেগুলো ঘী খেলে বাড়তে পারে তারা লোভ বজায় রেখে ঘী কে এড়িয়ে চলাই ভালো। উপকারি খাদ্য থেকে বেশি উপকার পেতে গিয়ে প্রয়োজনের বেশি খেয়ে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করার চেয়ে পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ, আবার আসবেন ধন্যবাদ।
Authors: rafak
Leave a Reply