Khati Uddog

Services, Innovations, Business Solutions & Social Welfare

আম্রপালি আম ( আম রূপালী )

আমকে আমরা সবাই জানি রসালো, মজাদার একটি ফল। তবে অনেকেই আমের আরো অনেক মজার তথ্যগুলো জানেন না। চলুন জেনে নেয়া যাক! হাজার হাজার ফলের জাত থাকলেও ফলের রাজা আম। ঠিক তেমনি শত শত আমের জাত থাকলেও আম্রপালি আম এর নিচে সব। এই আমের স্বাদ, মিষ্টতা অতুলনাহীন অসাধারন একটি আম। আর এই আম দেখতে অনেক সুন্দর ও খেতেও অনেক মজার। আম মানেই যেমন মৌসুমি ফল তেমন, সুস্বাদু, মিষ্টি ও রসালো মানেই আম্রপালি আম বা আম রুপালী আম।

আম্রপালি আমের বৈশিষ্ঠ্যঃ

এই জাতের বেশ কিছু বৈশিষ্ঠ্য রয়েছে। উন্নত জাতের আম এক গাছে এক বছর ফলে, পরের বছর ফলে না। কিছু আম্রপালি প্রতিবছর ফলে।এর মিষ্টতার পরিমান ল্যাংড়া, হিমসাগর ও খিরশাপাত আমের থেকেও ১৯% বেশি। আম্রপালি আম গাছের গঠন ছোট, গাছে ছোট আকারের আমের গুচ্ছো ধরতে দেখা যায়। আমের গঠন ছোট ও একটু লম্বা হালকা চেপ্টা এবং সুচালো নিচের দিকে। সাধারনত কাচা আমের রং গাড় সবুজ হয় এবং পাকলে কমলা লালচে রং এর হয়। অন্যান্য বানিজ্যিক জাতের আমের তুলনায় এতে প্রায় ২.৫-৩.০ গুন বেশি ক্যারোটিন থাকে। তবে এই আম্রপালি আম গাছের জীবনকাল সংক্ষিপ্ত হয়ে থাকে। আমের গড় কলন প্রতি বছর প্রতি হেক্টরে ১৬ টন প্রায় এবং উন্নত আম বেশি সময় থাকে না।

আম্রপালির আমের নামকরন ও ইতিহাসঃ

আম্রপালি দশেরি ও নিলম জাতের সংকরায়নের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার মায়ের নাম অজানা। ব্যুৎপত্তিগতভাবে, তার নামের দুই অংশ দুটি সংস্কৃত শব্দের সংমিশ্রণ থেকে উদ্ভূত আম্র,যার অর্থ আম এবং পল্লভা,যার অর্থ কচি পাতা বা শাখা। কথিত আছে, বৈশালীর এক রাজকীয় বাগানে আম গাছের পাদদেশে জন্মগ্রহণের জন্যই তার এমন নামকরণ হয়েছিল। আর তার নাম হয়ে যায় আম্রপালি বা আমরা সবাই জানি আম রুপালী।

আম্রপালি আম চেনার উপায়ঃ

রুপালী আম বা আম্রপালি নিচের দিকে একটু সুঁচালো, উপরে একটু গোল। আম্রপালি বা আম রুপালি খেতে মিষ্টি বেশি দেখতে কিছুটা গোলাকার কিছুটা লম্বাটে ও মসৃণ। এটির নাকটি দেখা যায় নিচের দিকে।

আম্রপালি কাচা আম ও আম্রপালি পাকা আম এর মধ্যে পাথক্যঃ

সাধারনত পাকা আমে কমলা, হলুদ, লালচে রং এর খোসা থেকে এবং সরস হওয়ায় এটি খাওয়ার জন্য উপযুক্ত হয়ে থাকে, তবে রপ্তানি করার সময় প্রায়শই সবুজ খোসাযুক্ত কাচা আম বাছাই করা হয়।আর আম পাকানোর জন্য ইনিলিন ব্যাবহার করা হলেও রপ্তানি করার অপরিষ্কার আমের প্রকৃতিভাবে পাকা আমের মতো বা স্বাদ হবে না

আম্রপালি পাকা আমের পুষ্টিগুণ এবং এর উপকারিতাঃ

এই আম্রপালি আমটি খেতে যেমন মজার, মিষ্টি , সুস্বাদ, ও মিষ্টি গন্ধযুক্ত । ঠিক তেমনি এই আমের গুনা গুন ও উপকারিতা রয়েছে। তো আসুন জেনে নি যে কি এমন উপকারিতা রয়েছে এই আম্রপালি আমে? , প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ৫০ গ্রাম করে শ্বেতসার পাওয়া যায়। পাকা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমানের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান যা কোলন ক্যান্সার , স্তন ক্যান্সার , প্রস্টেট ক্যান্সার , ও লিউকেমিয়া প্রভৃতি ক্যান্সার থেকে আমাদের শরীর কে রক্ষা করে পাকা আমে আছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার , পেকটিন , ভিটামিন সি যা কোলেস্টেরল লেভেলের ভারসাম্য বজায় রাখে পাকা আম খেলে ঘুম ভালো হয় যা আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারি ও পাকা আম আমাদের ত্বকের জন্য খুব উপকারি । ~এই ফলের আঁশ , ভিটামিন খনিজ উপাদান অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা হজমে সহায়তা করে । কোষ্ঠ্যকাঠিনা দূর করে। রক্তসল্পতা ও এ সকল রোগ প্রতিরোধ করতে কাজ করে।

আম্রপালি আম কাচা টক আবার আম্রপালি পাকা মিষ্টি হয় কেনোঃ

কাঁচা আমে বিভিন্ন ধরনের জৈব এসিড থাকে। যেমন – সাক্সিনিক এসিড , ম্যালেয়িক এসিড প্রভৃতি থাকে , যার ফলে কাঁচা আম টক কিন্তু আম যখন পরিপক্ব হয়ে পেকে যায় তখন আমের মধ্যে থাকা এই এসিডগুলির রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ তৈরি হওয়ার কারনে কাঁচা আম পাকলে মিষ্টি হয়

আম্রপালি পাকা আমে কোন এসিড থাকেঃ

১.অক্সালিফ এসিড

২.সাইট্রিফ এসিড

৩.ম্যালিক এসিড

৪.সাকসেনিক এসিড

থাকে তাই পাকা আম খুব সুস্বাদ আর মজা ও মিষ্টী খেতে।

আম্রপালি কাচা আমে কোন এসিড থাকেঃ

১.অক্সালিফ এসিড

২.সাইট্রিফ এসিড

৩.ম্যালিক এসিড ও

৪.সাকসেনিক এসিড

থাকে কাচা আম আমাদের দেহের রক্ত পরিষ্কার করে।

আম্রপালি কাচা আমের ও আম্রপালি পাকা আমের গুনাগুন ও ভিটামিন গুলোঃ

পাকা আম এর তুলনায় কাচা আমে ভিটামিন “সি” এর পরিমান বেশি থাকে। কাচা আমে খনিজ লবনের উপস্থিতিও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে। দাঁত, নখ, চুল, মজবুত করার জন্য কাচা আমের খনিজ লবন উপকারী ভূমিকা পালন করে ও হজম শক্তি বৃদ্ধী পায়।পাকা আম কোলেস্টেরলের যাত্রাকে নিয়ন্ত্রনে রাখে , পাকা আমে থাকে উচ্চমাত্রার ভিটামিন “এ” পেকটিন ও আঁশ। যা রক্তের কোলেস্টোরলের মাত্রাকে কমাতে কাজ করে। ফ্রেশ আমে থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের তরলের জন্য খুবই জরুরী একটি পুষ্টী উপাদান , যা উচ্চ রক্ত চাপকে নিয়ন্ত্রনে কাজ করে ।পাকা আমে ভিটামিন “এ” সমৃদ্ধ। আমের আয়রন, আশ, পটাশিয়াম, ভিটামিন “সি” ও খনিজ উপাদান শরীর সুস্থ-সবল রাখতে সাহায্য করে। ক্যারোটিন চোখ সুস্থ রাখে, সর্দি -কাশি দূরে রাখে। কাচা আমে ক্যারোটিনের পরিমান কম থাকে আর পাকা আমে ক্যারোটিন এর পরিমান বেশি থাকে।

কার্বাইড ও বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে আম্রপালি আম পাকানো মানব দেহের জন্য ক্ষতিকরঃ

ফল আমাদের খাদ্য ও পুষ্টির একটি অন্যতম উৎস। আর এই ফলের মধ্যে আছে আমাদের প্রিয় ফল আম যেটা বছরে এক বার আশে।কিন্তু দেশের ক শ্রেণীর সধ্যসতবভোগী মুনাফালোভী ব্যাবসায়ী কৃত্রিমভাবে আম পাকিয়ে আমের খাদ্যমান বিনষ্ট করছেহারহামেশা ক্যালসিয়াম কার্বাইড সহ বিভিন্ন প্রকারের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে আম বা ফল পাকানো হচ্ছে।এতে ক্রেতা সাধারন ভোক্তা প্রতারিত হয়ে আর্থিক এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে

কার্বাইড কী?

ক্যালসিয়াম কার্বাইড এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। এটি এক ধরনের যৌগ বা বাতাসে বা জলীয় সংস্পর্শে এলেই উৎপান্ন করে এসিটিলিন গ্যাসযা আমে প্রয়োগ করলে এসিটিলন ইমানল নামক বিষাক্ত পদার্থে রূপান্তরিত হয় যেটা খাইলে মানব দেহে অনেক ক্ষতির দিক ও সমস্যা দেখা দিতে পারে

কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম্রপালি আম খাইলে স্বাস্থ্যের কি ভাবে ক্ষতি হয়ঃ

কেমিকেল মিশ্রিত আম খাইলে মানুষ দীঘ্রমেয়াদি নানা রকম রোগে ভুগে, বিশেষ করে বদহজম, পেটেরপিড়া, পাতলা পাইখানা, জন্ডিস, গ্যাস্টিক, শ্বাস কষ্ট, অ্যাজমা, লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়া সহ ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ সৃষ্টি হয় এছারা মহিলাদের এর প্রভাবে বিকলঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারেশিশুরা বিষাক্ত পদার্থের বিষক্রিয়ার ফলে ক্ষতি গ্রস্ত হয়

কার্বাইড বিষক্ত পদার্থ দ্বারা পাকা আম্রপালি আমের স্বাদ কেমন হয়ঃ

কার্বাইড বিক্রিয়ায় আমকে কাচা থেকে পাকা অবস্থায় নিয়ে আসে। আম টা কাচা কিংবা আধাপাকা থাকুক না কেনো, কিছু কিছু আম বাইরে ও ভিতরে কেমিক্যালের প্রভাব এতোটাই ঘটে যে, ভেতরে বাইরে ফলটির রঙ ও স্বাদ স্বাভাবিক ভাবে পাকা আমরে মতো হয়ে যায়। কোনো কোনো আমের বেলায় কেবল তার বর্ণ আকর্ষণীয় হয়ে পড়ে। স্বাভাবিক পাকা আমরে মতো দৃষ্টি নন্দন টক টকে লাল , হলুদ , গোলাপী বর্ণ দেখে মানুষ আগ্রহ করে এসব কৃত্রিম ভাবে পাকানো আম পছন্দ করে কিনে নিয়ে যায় । কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তিনি হয়তো জানেন না যে, টাকা দিয়ে বিষ কিনলেন । এতো একদিকে যেমন আম এর পুষ্টি গুনা গুন নষ্ট হয় অপরদিকে আম খেতে বিস্বাদ, পানসা, শক্ত, তেতো, স্বাদযুক্ত মনে হয়

কার্বাইড ও বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে কৃত্রিমভাবে পাকানো আম্রপালি আম চেনার উপাইঃ

যদি কার্বাইড ও বিষক্ত পদার্থ দিয়ে আম পাকানো হয় তাহলে আমের ত্বক সুষম রড ধারন করে, আর আমেড় বতা শুঁকনো হোয়ে থাকে, বোটা তে কোনো রস থাকে না

কার্বাইড ও বিষক্ত পদার্থ দিয়ে আম্রপালি আম পাকানো মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর ও ভয়ংকর রোগ সৃষ্টি করে এতে আমাদের প্রত্যাশা/মতামতঃ

ভোক্তা অধিকার রক্ষায় ভোক্তা আইন আরও কঠিন ভাবে প্রয়োগের নিমিত্তে বিভিন্ন সংবাদপত্র, রেডিও, টিভিতে ব্যাপক প্রচার করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর অংশগ্রহনের মাধ্যমে আম, ফল ও খাদ্যদ্রব্যে বিষক্ত রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ রোধের ব্যাবস্থা নিতে হবে। সার্বিকভাবে ভোক্তা, ব্যাবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সচেতনার মাধ্যমেই আমরা ভেজালমুক্ত আম খেতে পারবো এবং চাহিদা পূরন হবে

আম্রপালি আম বা আম রুপালী আম ব্যাপারে সন্দেহের বিষয়ঃ

আম্রপালি আম রূপালী আম এর মতো দেখতে বা খেতে আর একটিও আম এই দেখে নেই। আম্রপালি আমের গন্ধতেই বুঝা যায় যে এইটা আম্রপালি আম। আম্রপালি আমকে সন্দেহ করার মতো একটি কারণ নেইতো আম্রপালি বা আম রূপালী আম নিঃস্বন্দেহে খেতে পারেন। তবে আম্রপালি আমের আরো দুটি জাত আছে (দেশি ও হাইব্রিড)। এই দুটি জাতি মান ও স্বাদ একই।

দেশি আম্রপালিঃ দেখতে একটু ছোটো, রুপালী আম বা আম্রপালি নিচের দিকে একটু সুঁচালো, উপরে একটু গোল। খেতে বেশি মিষ্টি । রঙ টা হালকা সবুজ পাকলে হলুদ রঙ হয়ে যায়। এটির নাকটি দেখা যায় নিচের দিকে।

হাইব্রিড আম্রপালিঃ এইটা সাইজে একটু বড় হয় রুপালী আম বা আম্রপালি নিচের দিকে একটু সুঁচালো, উপরে একটু গোল। আম্রপালি বা আম রুপালি খেতে মিষ্টি বেশি, দেখতে কিছুটা গোলাকার কিছুটা লম্বাটে ও মসৃণ। এটির নাকটি দেখা যায় নিচের দিকে।

আম্রপালি আম গাছে থাকতে প্যাকেট করলে উপকার/ক্ষতিকরঃ

আমরা অনেকে দেখেছি যে আম গাছে থাকতেই কার্বন নামন একটি চাইনা প্যাকেট পাওয়া যায়। সেই প্যাকেট প্রতিটা আমে মোড়ানো হয়ে থাকে আসলে একদিক প্যাকেট টা দিয়ে রাখা ভালো আবার অন্য দিকে ক্ষতি ও আছে , যেমনঃ প্যাকেট টা যদি আমে মোড়ানো থাকে তাহলে আমে কোন পোকা মাছি লাগতে পারে না আর আমের রং টাও সুন্দর হয় , আর অন্যদিকে আমে প্যাকেট টা থাকলে সূর্যের আলো লাগতে পারে না এতে আম ক্লোরোফিল পাই না তাই রং খুবই সুন্দর হবে কিন্তু খেতে স্বাদ ও মিষ্টি হইবে না

মৌসুমি ফল প্রাণ প্রিয় আম্রপালি আম ব্যাপারে আমাদের প্রত্যাশা/মতামতঃ

আম আমাদের দেহের জন্য প্রচুর উপকারি একটি ফল। আম আমদের দেহের রোগ প্রতিরোধ এর জন্যে অন্যতম একটি উপাদান। আম আমাদের জাতীয় ফল না হইলেও আমাদের জাতীয় গাছ আম গাছ। আসুন ভ্যাজাল মুক্ত খাবার খাই , আমাদের কাছে পাবেন কোনো রকম কার্বাইড ও বিষক্ত পদার্থ বিহিন পিওর গাছ পাকা আম আবার আসবেন। ধন্যবাদ!

শুধু আম্রপালি নয় এছাড়াও আরো জাতের আম রয়েছে। আমরা এমন কোন বড় কর্পোরেশন নই যে অজানা উৎস থেকে কিনে এনে বা আমদানী করে এমন আম খুব বেশি পাকা হয় যা আজকাল বেশিরভাগ দোকানে বা অনলাইনে পাওয়া যায়। একবার আপনি আমাদের গ্রাম বাগানের গাছের পরিপক্ক আম্রপালি আম খেয়ে দেখুন, আপনি কখনই আমদানি করা দোকান বা আরো অনলাইনে থেকে কেনা আম এর দিকে ফিরেও তাকাবেন না। আমাদের গ্রাম বাগানের আম্রপালি ও আমাদের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে কাঙ্খিত আমের জাত রয়েছে। আমাদের কাছে প্রথম মৌসুম, মধ্য মৌসুম এবং শেষ মৌসুমের আম রয়েছে। গাছে ওঠারও ঝামেলা নেই আপনাদের। কারণ, আমাদের কাছে আপনি এক ক্লিকেই আপনার পছন্দের আম নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য অথবা পছন্দের মানুষের জন্য কিনতে পারবেন।

Authors: rafak


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *